সর্দির সমস্যা যতটা না কষ্টদায়ক, তার থেকে বেশি বিরক্তিকর। সর্দি লাগলে নাক বন্ধ হয়ে যায়, এবং কিছুক্ষণ পরপরই সর্দি মোছার জন্য রুমাল কিংবা টিস্যু পেপার খোঁজা লাগে। তা ছাড়া, জনসম্মুখে নাক দিয়ে সর্দি পড়া বেশ বিব্রতকরও বটে। আজকের পোস্টে আমরা আলোচনা করব সর্দি থেকে মুক্তির উপায় নিয়ে। যে ১০টি সমাধান নিয়ে আমরা কথা বলবো, সেগুলো একদমই সাদামাটা কিছু পদ্ধতি, কিন্তু সর্দি মোকাবেলায় খুবই কার্যকরী।
সর্দি যে কারণে হয়ে থাকে
সাধারণত নাসারন্ধ্রে অতিমাত্রায় মিউকাস জমে গেলে সর্দি লাগে। এতে করে অনেক সময় নাক বন্ধ হয়ে যায়, এবং নিঃশ্বাস নেয়া কঠিন হয়ে ওঠে। তবে নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া ছাড়া সর্দি লাগতে পারে। মিউকাস বাদেও, যদি অন্য কোন কারণে নাসারন্ধ্রের গা ফুলে যায়, তাহলে সর্দি লাগতে পারে।
নাসারন্ধ্রে মিউকাস জমা, কিংবা নাসারন্ধের গা ফুলে যাওয়ার বেশ কিছু কারণ রয়েছে, কিন্তু এর মধ্যে সবথেকে পরিচিত কারণ হচ্ছে সাইনাসের ভাইরাল ইনফেকশন। এ ছাড়া, সাইনুসাইটিস, এলার্জি, কিংবা ঠাণ্ডা আবহাওয়ার কারণে সর্দি দেখা দিতে পারে।
সর্দি থেকে মুক্তির ৭টি উপায়
এমনিতে সর্দি লাগা তেমন কোন মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা নয়। সর্দি ছাড়া যদি আর কোন রোগের লক্ষণ না থাকে, তাহলে ঘরে বসেই সর্দি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব খুবই সাধারণ কিছু পদ্ধতির মাধ্যমেই। মৌসুমি ঠাণ্ডা, সর্দি কোন ধরনের ওষুধ ছাড়াই নিরাময় করা যায়।
প্রচুর পানি পান করুন

শুনতে অবাক লাগতে পারে, কিন্তু প্রচুর পানি করা সর্দি থেকে বাঁচার অন্যতম কার্যকরী উপায়। যেহেতু নাসারন্ধ্র ফুলে যাওয়া, কিংবা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে সর্দি লেগে থাকে, তাই শরীরকে পানিশূন্যতা থেকে দূরে রাখা খুবী আবশ্যকীয়। প্রচুর পানি কিংবা তরল পান করার মাধ্যমে সাইনাসে জমে থাকা মিউকাস হালকা হয়ে আসে, এবং তা ঝেড়ে ফেলা সহজ হয়। অন্যথায় এই মিউকাস হালকা হয় না এবং নাকের সর্দি ঘন এবং আঠালো হয়ে যায়।
কফি কিংবা এলকোহল থেকে এসময় একদমই দূরে থাকা উচিত।
গরম চা

ঠাণ্ডা লাগলে, কিংবা সর্দি হলে, গরম চা পান করা বেশ প্রশান্তিদায়ক হতে পারে। গরম চা এর তাপ এবং বাষ্প নাসারন্ধ্রের জট ছুটিয়ে দিতে বেশ ভালো কাজে দেয়। এছাড়া, চায়ের মধ্যে পুদিনা, আদা, কিংবা দারুচিনি দিলে তা আরও কার্যকর হয়।
চা পান করার আগে চেষ্টা করুন চা থেকে ওঠা বাষ্প নিঃশ্বাসের সাথে ভেতরে নিতে। শুধু সর্দিই নয়, হার্বাল টি কাশি এবং গলার খুসখুসে ভাব দূর করতে সাহায্য করে।
হিউমিডিফায়ার

একটি রিসার্চে জানা যায় যে, হিউমিডিফায়ারের উষ্ণ বাষ্প এলার্জিক রিএকশনের কারণে বেড়ে যাওয়া মিউকাস কমাতে সাহায্য করে। হিউমিডিফায়ার বাতাসের আর্দ্র্যতা বাড়িয়ে দেয়, আর এই আর্দ্র্য বাতাসে নিঃশ্বাস নিলে সাইনাসের ঘন মিউকাস পাতলা হয়ে আসে।
তবে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করলে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে তা যেন ভালো মানের হয়। নিম্নমানের হিউমিডিফায়ারের ফিল্টার ভালো হয় না, এবং তা বাতাসের বিশুদ্ধতা বাড়াতে তেমন কোন ভূমিকা রাখে না। যেই হিউমিডিফায়ারই ব্যবহার করেন না কেন, অবশ্যই তা নিয়মিত পরিষ্কার রাখবেন, অন্যথায় হিউমিডিফায়ারের ফিল্টারে মোল্ড কিংবা ব্যকটেরিয়া জমা হয়ে উল্টো সাইনাসের সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে।
গরম পানি দিয়ে গোসল

বিনা খরচে সর্দি-ঠাণ্ডা থেকে প্রশান্তি পেতে গরম পানি দিয়ে গোসল করুন। হিউমিডিফায়ারের মতি গরম পানির জলীয় বাষ্প বন্ধ হওয়া নাক খুলতে সাহায্য করতে পারে। শরীরে মৃদু উষ্ণ পানি ঢালার আগে গরম পানির ধোয়া নিঃশ্বাসের সাথে গ্রহণ করুন। এরপর আস্তে আস্তে শরীরে গরম পানি ঢালুন। এতে করে ঠাণ্ডা থেকে সাময়িক প্রশান্তি মিলবে।
নাসাল স্প্রে

সব ফার্মেসিতেই নাসাল স্প্রে পাওয়া যায়। তবে বিভিন্ন ধরনের নাসাল স্প্রের মধ্যে স্যালাইন নাসাল স্প্রে সবথেকে কাজের। এই ধরনের নাসাল স্প্রে এর মধ্যে লবনপানির উপাদান থাকে। নিঃশ্বাসের সাথে এটি গ্রহণ করলে আবদ্ধ নাক আস্তে আস্তে খুলে যায়। এছাড়া, সাইনাসের মিউকাসের পরিমাণও নাসাল স্প্রের মাধ্যমে কমানো যায়।
নাসাল স্প্রের দামও সাধারণত হাতের নাগালের মধ্যে থাকায় এটিও বেশ কম খরচের ঘরোয়া চিকিৎসা হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে।
জলপট্টি

এমনিতে জলপট্টি জ্বর কমাতে ব্যবহৃত হলেও সর্দি কমাতেও এর ভূমিকা আছে। বিশেষ করে, ভাইরাল ইনফেকশনের কারণে সর্দি হয়ে থাকলে জলপট্টি বেশ দ্রুত ফলাফল দিয়ে থাকে। মাথায় জলপট্টি দিয়ে রাখলে সাইনাসের রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া, মাথায় রাখা জলপট্টি নিঃশ্বাসের সাথে নেয়া বাতাসের জলীয় উপাদান বাড়িয়ে সর্দি কমাতে সাহায্য করে।
পরিষ্কার কাপড়কে মৃদু উষ্ণ পাঁইটে চুবিয়ে তা ভালোমত চিপে নিন, এবং কপালের ওপর ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মত দিয়ে রাখুন। সর্দির পরিমাণ অনেক বেশি হয়ে থাকলে এই পদ্ধতি দিনে দুই থেকে তিনবার অনুসরণ করুন।
ঝাল খাবার খান

স্বাস্থ্যকর ঝাল খাবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া রোধ করতে পারে। যদি আপনার এমনিতে ঝাল খাবার খাওয়ার অভ্যাস থেকে থাকে, তাহলেই এই পদ্ধতির শরণাপন্ন হওয়া উচিত। অন্যথায় সর্দি আর মারাত্মক অবস্থা ধারণ করতে পারে। অবশ্যই ঘরে বানানো ঝাল খাবার খাবেন। বাইরের খাবারে অনেক অস্বাস্থ্যকর উপাদান থাকে, যা কিনা অন্যান্য স্বাস্থ্যঝুকি বয়ে আনতে পারে।
সর্দি হলে যা করনীয়
সর্দি হচ্ছে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার একটি রিএকশন। এর অর্থ হচ্ছে, আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা চেষ্টা করছে ভাইরাস কিংবা ব্যকটেরিয়ার সংক্রমন থেকে আপনাকে উদ্ধার করতে। আমাদের দেখানো এই ৭টি উপায় ছাড়াও এ ক্ষেত্রে আরো কিছু করনীয় রয়েছে।
- পর্যাপ্ত ঘুম এবং বিশ্রাম আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার কার্যকারীতা বাড়িয়ে দেয়। দরকার হলে ভালো ঘুমের জন্য ঘুমাতে যাওয়ার আগে মৃদু উষ্ণ পানি দিয়ে গোসল করুন।
- পরিষ্কার কাপড় কিংবা টিস্যু দিয়ে কিছুক্ষণ পর পর নাক ঝেড়ে পরিষ্কার করুন। এতে করে নতুন করে সাইনাসে মিউকাস জমা হতে বেশি সময় লাগবে।
- নিয়মিত বিরতিতে ডিসইনফেক্টেন্ট হ্যান্ড ওয়াশ কিংবা সাবান দিয়ে হাত মুখ ধুতে হবে।
- চেষ্টা করুন যতটুকু সম্ভব ঘরে থাকতে। যদি ভাইরাল ইনফেকশনের কারণে আপনার সর্দি লেগে থাকে, তাহলে তা সংক্রামক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ঘরে থাকলে আপনার থেকে এই রোগ অন্যদের মধ্যে ছড়াবে না।
সর্দি লাগলে তাতে ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই। খুব সহজেই সর্দি নিরাময় করা যায়। যেহেতু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সর্দি নিজে থেকেই ভালো হয়ে যায়, তাই চেষ্টা করুন নিজের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে। স্বাস্থ্যকর খাবার, পর্যাপ্ত ঘুম এবং বিশ্রাম এক্ষেত্রে বিশেষ কার্যকরী। আর যদি বেশি অস্বস্তি হয়, তাহলে চেষ্টা করুন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে।