Open 24 Hours
+1 203 356 3596

সেরা দশটি ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার

13 Jun, 2023 | healthbm | No Comments

সেরা দশটি ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার

calcium rich foods

ক্যালসিয়াম একটি খনিজ, যা সুস্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। কিন্তু আমাদের দেশের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ দৈনিক প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়ামের অর্ধেকেরও কম গ্রহণ করে। শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাব বা অপর্যাপ্ততা অস্টিওপরোসিসের মতো গুরুতর স্বাস্থ্য জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। তাই আজকের আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করব বেশ কিছু ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার নিয়ে। 

কেন আমাদের ক্যালসিয়াম প্রয়োজন?

ক্যালসিয়াম আমাদের দেহের সুস্বাস্থ্যের একটি অন্যতম উপাদান, বিশেষত সুস্থ হাড়ের গঠন এবং বৃদ্ধির জন্য ক্যালসিয়াম প্রয়োজন। যদিও এটি প্রাকৃতিকভাবে মানবদেহে প্রচুর পরিমাণে থাকে, তবুও আমরা প্রতিদিন আমাদের ত্বক, নখ, ঘাম, প্রস্রাব এবং মলের মাধ্যমে ক্যালসিয়াম হারাতে থাকি। আমাদের শরীরও ক্যালসিয়াম তৈরি করতে সক্ষম নয়। যখন ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হয়, তখন শরীর আমাদের হাড় থেকে ক্যালসিয়াম গ্রহণ করে। এতে করে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের পাশাপাশি, মানবদেহের ভিটামিন ডিও প্রয়োজন কারণ এই খনিজটি শরীরকে ক্যালসিয়াম শোষণ করতে সহায়তা করে।

শরীরে ক্যালসিয়ামের উপকারিতা এবং ভূমিকা

মৌলিক শারীরিক ক্রিয়াকলাপ এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্যালসিয়াম প্রয়োজন। ক্যালসিয়ামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাগুলির মধ্যে নিম্নলিখিতগুলো অন্যতমঃ

হাড়ের স্বাস্থ্য

ক্যালসিয়াম হাড় এবং দাঁতের বিকাশ, বৃদ্ধি এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

পেশী সংকোচন

ক্যালসিয়াম পেশী সংকোচন নিয়ন্ত্রণ করে। শরীর যখন ক্যালসিয়াম ছাড়ে, তা পেশী সংকোচনের আন্দোলনকে সক্ষম করতে প্রোটিনের সাথে কাজ করে। এটি হৃৎপিণ্ডের পেশীর ক্রিয়াও বজায় রাখে।

হৃদয় প্রণালী

শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়ার জন্য ক্যালসিয়াম প্রয়োজন। এটি অনেক এনজাইমের জন্য একটি সহ-ফ্যাক্টর।

১০টি খাবার ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার

আপনি যদি চিন্তিত হন যে আপনি যথেষ্ট ক্যালসিয়াম পাচ্ছেন না, তাহলে শুধু আপনার খাদ্যের দিকে নজর দিন। ক্যালসিয়াম প্রাকৃতিকভাবে অনেক খাদ্যে পাওয়া যায়, এই তালিকায় আমরা সেই খাবারগুলোকেই স্থান দিয়েছি। আমাদের তালিকার খাবারগুলো নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে খেলে আপনার শরীরের ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দূর হবে। 

দুধ

milk

ক্যালসিয়ামের সবচেয়ে সস্তা এবং সহজলভ্য উৎসের মধ্যে একটি হলো দুধ। দুগ্ধজাত খাবারের ক্যালসিয়াম শরীর দ্বারা সবচেয়ে সহজে শোষিত হয়।

দই

curd

মিষ্টি এবং স্বাদবিহীন দই, অর্থাৎ টক দই, ক্যালসিয়ামের আরেকটি বেশ ভালো উৎস। এছাড়াও, টক দই প্রোবায়োটিক হিসেবেও দারুণ কাজে দেয়।  

ফোর্টিফাইড জুস

fortified juice

ফোর্টিফাইড জুস হল সেই সমস্ত পানীয় যেখানে প্রস্তুতকারক বিশেষভাবে ক্যালসিয়ামের এবং আরও কিছু ভিটামিন বা পুষ্টি যোগ করেছেন। ফোর্টিফাইড জুস কেনার আগে প্যাকেজিং লেবেলগুলি পরীক্ষা করুন৷ যদি আপনি ল্যাকটোজ ইনটলারেন্ট হন বা উদ্ভিদ-ভিত্তিক ডায়েট অনুসরণ করেন, তবে বাদাম, সয়া, চালের দুধ, বা কমলার রসের মতো ফোর্টিফায়েড পানীয়গুলি দুধের বিকল্প ক্যালসিয়ামের উৎস হিসেবে বেছে নিতে পারেন। 

টোফু

tofu

টোফু বিন দই নামেও পরিচিত। টোফু তৈরির উপাদানগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে, বিশেষ করে বিভিন্ন ধরনের বিন এর কারণে। এটি গ্লুটেন-মুক্ত এবং কম কোলেস্টেরলযুক্ত হওয়ায় অতিরিক্ত সুবিধাও রয়েছে।

ফোর্টিফাইড খাবার

fortified food

পানীয়ের মতো ফোর্টিফাইড খাবারে খাদ্যের গুণমানকে সমৃদ্ধ করার জন্য পুষ্টিকর উপাদান আলাদা করে যোগ করা হয় আপনি শস্যদানার রুটি, বিভিন্ন ধরণের গ্রানোলা, শস্যের সিরিয়াল, এবং মিষ্টি ছাড়া ওটমিল থেকে ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার বেশ সহজেই পেতে পারেন। 

পাতাযুক্ত সবুজ শাকসবজি

leafy greens

কিছু ধরণের গাঢ়, সবুজ শাক-সবজি, যেমন পালং শাক এবং কেল, ইত্যাদিতে ক্যালসিয়ামে বেশি থাকে। তবে, পালং শাকে অক্সালেটও রয়েছে, যা শরীরের পক্ষে ক্যালসিয়াম শোষণ করা কঠিন করে তুলতে পারে, একারণে পালং শাক খেলেও পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত। পাতাযুক্ত সবুজ শাকের অন্যান্য উত্সগুলির মধ্যে রয়েছে সুইস চার্ড, মটর, ব্রকলি এবং ব্রাসেল স্প্রাউট।

মটরশুটি এবং মসুর ডাল

beans

ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি, মটরশুটি এবং মসুর ডালে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ফাইবার এবং মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট রয়েছে। যারা দুগ্ধ-মুক্ত বা নিরামিষ খাবার পছন্দ করেন তাদের জন্য এটি আরেকটি চমৎকার ক্যালসিয়াম খাদ্যের উৎস এই দুটি।

আলমন্ড এবং বীজ

almonds

আলমন্ডে উচ্চ মাত্রায় ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ এবং ভিটামিন ই রয়েছে। চিয়া, পোস্ত এবং তিলের মতো বীজগুলো ক্যালসিয়ামের নির্ভরযোগ্য, এবং এগুলোতে স্বাস্থ্যকর চর্বি এবং প্রোটিন রয়েছে।

সার্ডিন এবং সালমন

sardine and salmon

আমাদের দেশে সার্ডিন এবং সালমন মাছ তেমন একটা পাওয়া যায় না, তবে বিভিন্ন সুপারশপ বিদেশ থেকে এগুলো আমদানি করে থাকে। এগুলোতে অন্যান্য মাছের মত প্রয়োজনীয় ওমেগা -3 ফ্যাটি অ্যাসিড নেই, যা মস্তিষ্কের কার্যকারিতার জন্য অত্যাবশ্যক। কিন্তু এই মাছগুলোতে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ অন্যান্য মাছ থেকে খুব বেশি।

পনির

cheese

পারমেসানের মতো শক্ত পনিরে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকে, এবং মজারেলার মত নরম পনিরে কম পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে। কটেজ পনিরও ক্যালসিয়ামের একটি চমৎকার উৎস এবং প্রোটিনেও ভরপুর।

প্রতিদিন কতটুকু ক্যালসিয়াম গ্রহণ করা উচিত?

ক্যালসিয়ামের প্রস্তাবিত পরিমাণ আপনার বয়সের উপর নির্ভর করবে। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রস্তাবিত দৈনিক ক্যালসিয়ামের গড় পরিমাণ (১৯-৫০ বছর) হল ১,০০০ মিলিগ্রাম। বয়স অনুযায়ী কতটকু ক্যালসিয়াম দৈনিক গ্রহণ করা উচিত, তার একটি তালিকা নিচে দেয়া হলোঃ

  • ০-৬ মাস: ২০০ মিগ্রা
  • ৭-১২ মাস: ২৬০ মিগ্রা
  • ১-৩ বছর: ৭০০ মিগ্রা
  • ৪-৮ বছর: ১০০০ মিগ্রা
  • ৯-১৮ বছর: ১৩০০ মিগ্রা
  • ১৯-৫০ বছর: ১০০০ মিগ্রা
  • ৫১-৭০ বছর: ১০০০ মিলিগ্রাম (পুরুষ) এবং ১২০০ মিলিগ্রাম (মহিলা)

ক্যালসিয়ামের ঘাটতি কি?

হাইপোক্যালসেমিয়া বা ক্যালসিয়ামের ঘাটতি তখনি দেখা দেয় যখন আপনার শরীরে ক্যালসিয়াম অপর্যাপ্ত মাত্রায় থাকে। এ কারণে বেশ কিছু গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। 

অস্টিওপোরোসিস

হাড় ক্যালসিয়াম সঞ্চয় করে। হাড়ের বৃদ্ধি, রক্ষণাবেক্ষণ, এবং বিকাশের জন্য উচ্চ মাত্রার ক্যালসিয়াম প্রয়োজন। যখন শরীরে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ কম থাকে, তখন শরীর হাড় থেকে এই খনিজকে সরিয়ে দিতে পারে যা ভঙ্গুর বা দুর্বল হাড়ের জন্য দায়ী হতে পারে। 

দাঁতের সমস্যা

একইভাবে, দাঁতের ও মুখের স্বাস্থ্যের জন্য পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম প্রয়োজন। ক্যালসিয়াম ঘাটতি থাকলে ভঙ্গুর দাঁত, দাঁত পচা বা ক্ষয় হতে পারে।

পেশীর সমস্যা 

ক্যালসিয়াম পেশী সংকোচনের জন্য ব্যবহৃত একটি অপরিহার্য উপাদান, তাই ক্যালসিয়ামের ঘাটতি শরীরে পেশীতে সমস্যা সৃষ্টি করবে। 

ক্লান্তি

ক্যালসিয়ামের ঘাটতি থাকলে যে কেউ সবসময় অত্যন্ত ক্লান্ত বোধ করতে পারে। এছাড়া মস্তিস্বকের জটিলতা, যেমন ভুলে যাওয়া বা মনোযোগ দিতে অক্ষমতা, ইত্যাদি ক্যালসিয়াম ঘাটতির সাধারণ লক্ষণ।

চুল, ত্বক ও নখের সমস্যা

দীর্ঘমেয়াদী ক্যালসিয়ামের ঘাটতি চুল, ত্বক এবং নখের উপর প্রভাব ফেলে। একজন ক্যালসিয়াম-স্বল্পতাযুক্ত ব্যক্তি অল্প বয়সে চুল পড়ে যাওয়ার মুখোমুখি হতে পারে। একইভাবে, তাদের নখ ভেঙ্গে এবং ভঙ্গুর হয়ে যেতে পারে। ত্বকের সমস্যা, যেমন একজিমা বা সোরিয়াসিস হতে পারে ক্যালসিয়ামের ঘাটতির কারণে।

যেহেতু খাদ্য উপাদান থেকে ক্যালসিয়াম না পেলে শরীর হাড়ের থেকে ক্যালসিয়াম শোষণ করা শুরু করে দেয়, কাজেই ক্যালসিয়ামের অভাব অনেক সময় সাথে সাথেই টের পাওয়া যায় না। একারণে সবসময় যথাযথ পরিমাণে ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার খাওয়া উচিত।